...

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা, লেবু ,লেবু খাওয়ার নিয়ম, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

লেবুর উপকারিতা ও অপকারিতা উভয় রয়েছে আমরা আজ লেবু এসব বিষয় নিয়ে জানবো তবে তার আগে লেবু নিয়ে কিছু কথা জেনে নেই। বাংলার মানুষের খাবারের সময় পাতে এক টুকরো লেবু থাকবে না, এমনটা যেন হওয়ার-ই  নয়। লেবু যেমনি অল্প টাকায় পাওয়া যায় তেমনি এর রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন। আমরা আমাদের খাওয়ার সময় নিয়মিত যদি লেবুর রস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলি তাহলে এর উপকারিতা  অনেক। আমরা সকলেই এই সহজলভ্য লেবু ফলটি সম্পর্কেই একটি কথা জানি যে লেবু হল ভিটামিন সি এর একটি সমৃদ্ধ উৎস। আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই লেবু ফলটিকে গৃহস্থলীর বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত করে থাকেন। আমাদের সাধারণ সর্দি কাশি থেকে শুরু করে মরণবেদী ক্যান্সার পর্যন্ত প্রতিরোধ করেতে পারে  এই সহজলভ্য লেবু ফলটি।

অন্যদিকে, আমাদের ওজন কামানো থেকে শুরু করে শরীরকে ডিটক্সিফাই করাতে লেবুর উপকারিতা যে কতটা রয়েছে সেটার কমবেশি আমরা সবাই  জানি । সকালে উঠে এক গ্লাস ঈষদুষ্ণ পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ওজন কমাতে যেমন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে  তেমন আমাদের খাবারের সাথে এক টুকরো লেবু চিপে নিলে খাবারের স্বাদও অনেকগুণে বৃদ্ধি করে থাকে, আমাদের মধ্যে অনেকে-ই তো আবার সকালের চা বা কফির বিকল্প হিসাবেও লেবুজল পান করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন ।

কিন্তু এছাড়াও লেবুর যে আরও বিশেষ কিছু উপকারী গুন্ রয়েছে যেগুলো আপনার হয়তো এই মুহূর্তে ধারণার মধ্যেই নেই , আচ্ছা ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই, আপনার ধারণার বাহিরে লেবুর উপকারিতা সম্পর্কে যে বিষয় গুলো রয়েছে তা বিস্তারিতভাবে জেনে নিন।

এক নজরে লেবুর উপকারিতা গুলো দেখে নিন (Take a look at the benefits of lemon at a glance):

  1. ত্বক সুন্দর রাখে,
  2. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে,
  3.  শরীরে জলের ভারসাম্য  
  4.  বজায়(Hydrate) রাখে,
  5. কিডনি ভালো রাখে,
  6. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,
  7. এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোধ করে, 
  8. ব্যাথা উপসম করে,
  9. দেহে Ph এর  সমতা বজায় রাখে,
  10. হার্ট ও ব্রেন সুস্থ্য রাখে,
  11. ওজন কমাতে সাহায্য করে,
  12. খাদ্যকে সুস্বাদু করে,
  13. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, 
  14. খনিজ লবণের সমতা বজায় রাখে, 
  15.  মুখের দুর্গন্ধ দূর করে,
  16. মুড ভালো রাখে,
  17. স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে,

লেবুর উপকারিতা (Benefits of lemon):

১) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

আমরা সবাই কমবেশি এইটা জানি যে, লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে  ভিটামিন সি , আর এই ভিটামিন সি আমাদের মানব শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আনেক সাহায্য করে পাশাপাশি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকিও অনেকটা কমিয়ে দেয়। অন্য দিকে লেবুতে থাকা  অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট গুলি উভয়ই মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ – যা ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষ ধংসে ও সহায়তা করে।  তাই প্রতিদিন আমাদের অন্ততপক্ষে একটি করে লেবু খাওয়া উচিৎ এর ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যাবে যার ফলে বিভিন্ন ভাইরাল জ্বর ও সংক্রমণের হাত থেকে আমরা সহজেই রক্ষা পেতে পারি।

২) ত্বক সুন্দর রাখে :

লেবুতে রয়েছে অনেক বেশি পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের রক্তকে দূষণ মুক্ত রাখে অর্থাৎ রক্ত থেকে খারাপ ও বিষাক্ত রাসায়ানিক পদার্থ গুলোকে সহজেই বাইরে বের করে দেয় রেচন প্রক্রিয়া । যার ফলে আমাদের ত্বক হয় সুন্দর ও স্বাস্থ্য-উজ্জ্বল ।

 তাই আমার যদি নিয়মিত লেবুজলে পান করি তাহলে লক্ষ্য করলে বুজা যাবে যে, আমাদের ত্বকে থাকা কালো বলিরেখা গুলো ধীরে ধীরে দূর হয়ে যাচ্ছে এবং তার পাশাপাশি আমাদের ত্বকের শুস্কতা কমে গিয়ে ত্বক হচ্ছে কোমল ও মসৃন ।

৩) কিডনি ভালো রাখে :

কেউ যদি নিয়মিত লেবুজল খায় তাহলে তার কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায় কারণ লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে সাইট্রিক অ্যাসিড যা মানব দেহের কিডনিতে পাথর তৈরী হতে দেয় না, আর পাথর যদি আগে থেকে তৈরী হয়েও যায় কোনো কারণে তাহলে সেটাকে ভেঙে দিয়ে মূত্রের মাধ্যমে শরীরের বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে ।

তাই কিডনি সুস্থ্য রাখতে, সম্ভব হলে প্রতিদিন সকালে আপনার চাহিদা অনুযায়ী লেবুজল পান করুন । 

৪)  শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে:

দেখুনতো আপনার দেহকে শুস্ক হয়ে পরা থেকে বাঁচাতে গেলে, প্রতিদিন আপনাকে যে পর্যাপ্ত পরিমানে জল খেতে হবে এটা আপনি হয়তো বা  জানেন কিন্তু জেনেও হয়তো আপনার চাহিদা মতে আপনি জল পান করতে পারছেন না ।

কারণ কি জানে..? তা হলো জলের তো আর নিজস্ব  কোনো স্বাদ নেই তাই শরীরের উপকারের কথা ভেবেও আপনার চাহিদা পরিমানে জল পান করা সম্ভব হয়ে ওঠে না ।

কিন্তু সেই জলের মধ্যে  যদি আপনি এক টুকরো লেবু চিপে নিতে পারেন তাহলেই তো সোনায় সোহাগা…! না না আমি মোটেও মজা করছি না – কারণ জলে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে লেবুর যে উপকারিতা গুলো আপনি পাবেন তার পাশাপাশি আপনার জলের স্বাদও বেড়ে যাবে, যারফলে অতিরিক্ত পরিমানে জল পান করতেও আর আপনার অসুবিধা হবে না ।

যার ফলশ্রুতিতে আপনার শরীরে জলের ভারসাম্যও বজায় থাকবে  আর লেবুর উপকারী গুনগুলিও আপনি সহজে পেয়ে যাবেন ।

৫) এনিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোধ করে :

লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমানে ভিটামিন সি থাকার পাশাপাশি কিছু পরিমানে আয়রন ও রয়েছে । আর তাছাড়া লেবুতে থাকা ভিটামিন সি আমাদের শরীরের অন্যান্য খাদ্য উপাদান গুলো

থেকে আয়রন শোষণ করে, আর এই শোষিত আয়রন ও লেবুতে থাকা আয়রন উভয় যুক্ত হয়ে রক্তের লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে এবং আমাদের অস্থিমজ্জা গুলোকে সক্রিয় রাখে।যার ফলে শরীরে রক্তের লোহিত কণার পরিমান ঠিক থাকে এবং আমাদের রক্তের ও আর ঘাটতি হয় না।

আর এইভাবে, লেবু আমাদের দেহে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা রোগ প্রতিহত করতে সহায়তা প্রদান  করে।

 ৬) ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:

লেবুতে ফ্লেভানয়েড (Flavonoid) নামে একধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরে উৎপন্ন হাওয়া বিভিন্ন ফ্রি রেডিক্যাল গুলোকে অকেজো করে দেয় বা বাইরে বের করে দিয়ে শরীরের সুস্থ কোষ গুলোকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে । যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।

এইকারণে, নিয়মিত লেবুজল পান করতে পারলে আমাদের শরীরে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেকাংশ-ই কমে যাবে ।

৭) দেহে Ph এর  সমতা বজায় রাখে:

শরীরে অ্যাসিডিটির মাত্রা বেড়ে গেলে অর্থাৎ pH এর মান ৭ থেকে কমে গেলে আমাদের দেহে  রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভবনাও বেড়ে যায় । লেবু যদি ও জৈব অ্যাসিড (সাইট্রিক অ্যাসিড→C6H8O7 ) প্রকৃতির, কিন্তু খাওয়ার পরে আমাদের শরীরে ক্ষারীয় প্রকৃতির আচরণ করে । তাই শরীরে এসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে… লেবু খাওয়ার পরে এর ক্ষারীয় আচরণের জন্যে এসিডের মাত্রাটা প্রশমিত হয়ে এসিড ও ক্ষারের সমতা বজায় থাকে, যার ফলে শরীরে রোগব্যাধি হওয়ার সম্ভবনাও কমে যায় ।

আর এইভাবে লেবু আমাদের শরীরে  Ph  এর সমতা বজায় রাখে এবং এর পাশাপাশি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে ।

৮) ব্যাথা উপসম করে:

শরীরের জয়েন্টএ ইউরিক অ্যাসিডেব় মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে আমরা যে ব্যাথ্যা অনুভব করে থাকি তার থেকে মুক্তি পাওয়ারও আর একটি কার্যকরী উপায় হলো লেবুজল , কারণ

লেবু খাওয়ার পরে, তা শরীরের মধ্যে ক্ষারের (alkaline ) মতো আচরণ করে এবং জয়েন্ট গুলো থেকে ইউরিক অ্যাসিড কে প্রশমিত করে, ইউরিক অ্যাসিড এর পরিমান কমিয়ে দেয় এবং এভাবে ইউরিক অ্যাসিডের কারণ জনিত জয়েন্টের ব্যাথা কমায় ।

এইকারণে  প্রতিদিন লেবুজল পান করলে আপনার ইউরিক অ্যাসিডের কারণ জনিত জয়েন্টের ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন ।

৯) ওজন কমাতে সাহায্য করে: 

দেহের ওজন কমাতে আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত ও জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি হলো  সকাল সকাল খালি পেটে এক গ্লাস লেবুপানি পান করা। লেবু ও পানি এই দুটো উপাদান ভিন্ন ভিন্ন  ভাবে শরীরের জন্য উপকারী। কিন্তু এই দুটো উপাদান যদি একসঙ্গে গ্রহণ করা হয় তাহলে কি আসলেই ততটা উপকারী, যতটা আমরা মনে করি ?

লেবুর রস মেশানো পানি স্বাদে ও গুণে শরবত (চিনি ছাড়া)হিসেবে বেশ চমৎকার। এটি পাকস্থলি ও অন্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে পাকরস তৈরিতে এনজাইম এর মত কাজ করে। পেটের ফুলা ভাব বা অ্যাসিডিটির সমস্যা কমিয়ে পেটকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। আমরা ভারী খাবার খাওয়ার পর কোমল পানীয়র পরিবর্তে বেছে নিতে পারি এই লেবুজল।

আবার কেউ কেউ তো দিনের শুরু টা-ই করেন চা অথবা কফি দিয়ে যা আমাদের শরীরে তৈরি করে পানিশূন্যতা, কিন্তু দিনের শুরু টা যদি হয় ৪০০ মিলিলিটার কুসুম গরম পানি সঙ্গে দুই চা চামচ লেবুর রস আর একটু মধুর তৈরি শরবত দিয়ে তাহলে লেবুতে থাকা জলে দ্রবণীয় পেক্টিন তন্তু ও রাফেজ বস্তু যা পান করতে আমাদের পানিশূন্যতা কে দূর করার পাশাপাশি আমাদের পেটে থাকা অতিরিক্ত ক্ষুধা ভাব কে কমিয়ে দিবে যার ফলে আপনার অল্প খেলেই পেট ভড়া অনুভূত হবে এতে শরীরে ক্যালরি কম প্রবেশ করবে এবং যার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

১০) হার্ট ও ব্রেন সুস্থ্য রাখে :

হার্ট ও ব্রেনকে সুস্থ ও স্বাস্থ্যজ্জল করার জন্য যেনে নেওয়া যাক একটা রেসিপি….. 

লেবুর গুনাগুন কে আরো বৃদ্ধি করার জন্য প্রথমে  আপনি এক কোয়া রসুন ও এক টুকরো আদা  সাথে নিতে পারেন। তারপর তা এক সঙ্গে পরিমাণ মত পানিতে মিশিয়ে ফুটিয়ে নিন, এই ফুটানো মিশ্রণকে ঠান্ডা করে এক চা চামচ মধু ও অর্ধেক টা লেবুর রস নিয়ে তা মিশিয়ে আপনি পান করুন। 

এই মিশ্রণে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি নানান ধরনের খনিজ পদার্থ ও রক্তকে তরল রাখার মত প্রাকৃতিক গুনাগুন। 

যা আমাদের দেহের সংকুচিত রক্তনালীকে প্রসারিত করতে, রক্ত নানীর প্রাচীর কে মজবুত

করতে, রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কে ও দূষিত পদার্থকে দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এখানে মনে রাখবেন লেবুর রস মিশ্রণটি ঠান্ডা হওয়ার পরেই মিশাতে হবে না হয় তাপ পাওয়া মাত্রই এর ভিটামিন সি এর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যাবে। 

১১) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে :

পূর্বেই জেনেছি যে লেবুর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পেক্টিন তন্তু বা ফাইবার বা রাফেজ বস্তু । এই পেক্টিন তন্তু বিপাক প্রক্রিয়ায় ও হজমশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে , এতে বৃহদান্তে গাজন প্রক্রিয়া খাদ্যের অপাচ্য অংশ পঁচাতে ও পরিশেষে মলের সাথে বাহির করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করো এভাবে কোষ্টকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিয়ে থাকে লেবুপানি।

১২) খাদ্যকে সুস্বাদু করে:

লেবুর বিশেষ স্বাদ ও সুঘ্রাণ যে কোনো খাবার কে আরো দ্বিগুন সুস্বাদু করে তোলে । তাই কোনো খাবার খেতে  স্বাদ তেমন ভালো না লাগলেও সেই খাবারে যদি একটু লেবুর রস দিয়ে মিশিয়ে দেওয়া যায় তাহলে খাবারটি খেতেও যেমন ভালো লাগে অপরদিকে খাদ্য পরিপাকে ও সাহায্য করে ।

১৩) মুখের দুর্গন্ধ দূর করে:

মনে করেন আপনি কখনও কাঁচা পেঁয়াজ বা রসুন জাতীয় কোন তীব্র গন্ধের খাবার বা অন্য কোনো তীব্র গন্ধের খাবার খেলেন, অথবা অন্য কোনো গন্ধ যুক্ত খাবার খেলেন।  এ ধরনের খাবার গুলো খেলে দীর্ঘ সময় যাবৎ মুখ দিয়ে ওই খাবারের গন্ধই বেরোতে থাকে, যা আপনার জন্য খুবই অস্বস্তিকর হয়ে উঠে। তখন ওই পরিস্থিতিতে যদি আপনি এক টুকরো লেবুর রস বা লেবু জল পান করেন  তাহলে ওই খাবারের তীব্র গন্ধটা তো চলেই যাবে তার সঙ্গে মুখ দিয়ে একটা সুগন্ধ বের হবে যা আপনার চলার পথের কনফিডেন্স কে বাড়িয়ে দিবে।

১৪) খনিজ লবণের সমতা বজায় রাখে :

আপনি একটা বিষয় খেয়াল করেছেন কখনো, যখন আপনার বাসায় দূর থেকে কোনো অতিথি আসে তখন তাঁদেরকে আপনার মা লেবুর শরবত দেয়, এখন বলতে পারবেন কেন তা দেওয়া হয়..? অথবা ধরেন যে, আপনি অনেক পরীশ্রম করলেন   বা অনেক্ষন ধরে ব্যায়াম করার করার পর আপনি কেনই বা স্বল্প মূল্যের লেবু শরবত টাই খুজেন..?  তার একটাই কারন আপনার বাসায় মেহমান আসা থেকে শুরু করে আপনার পরিশ্রম পর্যন্ত এ সব কিছুতেই শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমানে খনিজ লবন বেরিয়ে যায় । আর তখন আপনি যদি শুধু জল না খেয়ে, তার সাথে যদি কিছু পরিমানে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়ে পান করেন, তাহলে সেই খনিজ লবণের ঘাটতি আপনার শরীরে অনেকটা পূরণ হয়ে যায় এবং আপনার শরীর কে অল্প সময়ের মধ্যেই করে তুলে ঠান্ডা ও সতেজ। 

কারণ লেবুতে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন সি , ভিটামিন ই , ক্যালসিয়াম (Ca),  ম্যাগনেসিয়াম (Mg), পটাসিয়াম (K),  আয়রন(Fe) ,  ফসফরাস (P),  দস্তা (Zn) , ফোলেট (C19 H19 N7 O6) , তামা (Cu), , নিয়াসিন(বি৩), থায়ামিন(বি১), প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড(বি৫), সাইট্রিক অ্যাসিড (C6H8O7) ইত্যাদি খনিজ পদার্থ।  

১৫) স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে: 

স্কার্ভি রোগটি হলো ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিডের অভাব জনিত একটি বিরল রোগ। আর অপরদিকে স্বল্পমূল্যের এই লেবু ফলটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ও পর্যাপ্ত পরিমাণে খনিজ পদার্থ, তাই নিয়মিত লেবুপানি পান করলে আপনার দাঁতের মাড়ি ও ত্বক সুস্থ  থাকবে আর কোনো সংক্রমণ হবে না।

১৬) মুড ভালো রাখে:

আচ্ছা আপনি অবশ্যই অনুভব করেছেন যে লেবু কাটার পর তার ঘ্রাণটাকে, কখনো কি এই ঘ্রাণ নিয়ে বিরক্ত বোধ করেছেন..?  হয়তো বা না। এখন বলতে পারবেন তা কেন..? 

কারণ লেবুতে থাকা বিশেষ ঘ্রাণ যা অ্যারোমার কাজে ব্যবহৃত হয়, যা মানুষের মানসিক চাপ ও অবসাদ কে কমিয়ে দেয় এবং এই ব্যবহৃত অ্যারোমা যা বাতাসের ভেসে থাকা ব্যাকটেরিয়া গুলোকে সহজেই মেরে ফেলতে সাহায্য করে। যার ফলে আপনার মন ও মানসিকতা কিছুক্ষণের মধ্যেই সতেজ হয়ে উঠে। 

অতিরিক্ত লেবু খাওয়ার অপকারিতা:

এতক্ষণ লেবুর উপকারিতা পড়ে ভাবছেন এখনই লেবু এনে খাওয়া শুরু করবেন..? কিন্তু আপনি জানেন কি এই ফলটি পরিমাণে অতিরিক্ত ও সঠিক ব্যবহার না জানলে হিতে বিপরীত হতে পারে..? 

লেবুর অনেক উপকারিতার পাশাপাশি বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও রয়েছে । এখন চলুন জেনে নেই পরিমাণে অতিরিক্ত ও সঠিক ব্যবহার না জানলে লেবু খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে-

বেশি লেবু খাওয়ার অপকারিতা : 

 ১. দাঁতের এনামেল ক্ষয়ে যায় 

ক্যালসিয়াম দ্বারা গঠিত বিভিন্ন ক্ষারীয় উপাদান দিয়ে গঠিত হয় দাঁতের এনামেল। যা দাঁতের বাহিরে স্ফটিক কাঠামোতে সাজানো থাকে । দাঁতের এনামেলে প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট, ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ক্যালসিয়াম ফ্লোরাইড, ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড যৌগ গুলোই পাওয়া যায় আর এ ক্যালসিয়াম দ্বারা গঠিত  দাঁতের এনামেল হল দাঁতের বাইরের স্তর। আমরা যখন অতিরিক্ত লেবু খেয়ে থাকি তখন এর মধ্যে থাকা সাইট্রিক এসিড দাঁতের ক্ষারীয় উপাদানের সাথে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে দাঁতের এনামেলকে ক্ষয় করে থাকে। 

Lemon Juice 

২. মুখমণ্ডলের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়

আমাদের মুখের অভ্যন্তরে থাকা কোষ ও কোষ গুচ্ছ গুলো সব সময় লালারস দ্বারা ভিজে থাকে যা বিভিন্ন ক্ষারীয় যৌগ দ্বারা গঠিত। পরিমাণে বেশি লেবুর রস গ্রহণের ফলে মুখের মধ্যে থাকা নরম কোষ গুলো সাইট্রিক অ্যাসিড দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুখে থাকা লালা রস তার সমপরিমাণে সাইট্রিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে প্রশমিত হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত সাইট্রিক এসিড যা মুখের অভ্যন্তরের কোষগুলোকে ক্ষত করে ফেলে। 

৩. অ্যাসিড এবং বমির আশঙ্কা থাকে

এই বিষয় অনেকটা তেলে মাথায় তেল দেওয়ার মত কেন বললাম বুঝলেন না তো..? আসেন বুঝিয়ে বলি.. 

ধরেন আপনার পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির মাত্রা বেশি, তো এখন আপনি যদি লেবুর রস পান করেন তাহলে লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড ও আপনার পাকস্থলীর এসিডের সাথে যুক্ত হলো। এখন আপনি বলেন আপনার এসিডের মাত্রা কমলো না বাড়লো…? নিঃসন্দেহে আরও বেড়ে গেল।  অর্থাৎ পরিমাণে অতিরিক্ত কোন জিনিসই ভালো না তাই আপনার এক্ষেত্রে বমি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই থাকে।

৪. পেট খারাপ

মনে করেন আমাদের মধ্যে কারো পেট খারাপ অর্থাৎ তার হয় বদহজম হয়েছে অথবা পেটে অতিরিক্ত গ্যাস জমেছে। এখন এদিকে লেবু রসে থাকা ফাইবার বা রাফেজ বস্তু যা খাবার হজমে সহযোগিতা করে। তবে তা যখন মাত্রাদিক গ্রহণ করা হয় তখন পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা ও বৃদ্ধি পায়, যার ফলে তা বদহজম ও পেট ব্যথার মত অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করে থাকে। 

৫.মাইগ্রেনের সমস্যা

প্রতি ১০০ g লেবুতে প্রায় ০.৯ g উদ্ভিজ প্রোটিন বৃদ্ধমান আর এই লেবুতে থাকা প্রোটিনটি পরিপাক প্রক্রিয়ায় টাইরামিন নামক অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়। যা মাইগ্রেনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য খুবই বিপদজনক। কারণ এটি হঠাৎ করেই মস্তিষ্কে রক্তের প্রবাহ বাড়িয়ে দেয় যা পরবর্তীতে মাইগ্রেন অ্যাটাক করে। 

৬. ডিহাইড্রেড 

মাত্রাদিক লেবু পানি পান করা আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এতে আপনার শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট ও সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলো মূত্রের সাথে বেরিয়ে যায়

এবং এতে আপনার দেহ ডিহাইড্রেড হয়ে পরে।  

৭. রক্তে আয়রনের পরিমাণ বেড়ে যায়

ভিটামিন সি যা আমাদের দেহে লোহ বা আয়রন(Fe) সংরক্ষণ করতে সক্ষম, অতিরিক্ত লেবুপানি গ্রহণের ফলে আমাদের দেহের ভিটামিন সি এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যা দেহে আয়রন মাত্রাদিক সংরক্ষণ করে থাকে যা আমাদের দেহের জন্য হুমকি জনক।

৮. উৎসেচক ভেঙে যায়

প্রয়োজনের বেশি লেবুর রস গ্রহনের ফলে পাক রসের প্রয়োজনীয় উৎসেচক পেপসিন ভেঙে ক্ষতিকর এনজাইম উৎপন্ন হয় যার ফলে আমাদের পেপটিক আলসারের মত মারাত্মক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে 

আর্টিকেলটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 

আবার দেখা হবে অন্য কোন আর্টিকেলে 

ততক্ষণ পর্যন্ত আপনার সুস্থতা 

কামনা করছি। 

Leave a Comment

Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.