...

এক্সফোলিয়েশন / Exfoliation:

এক্সফোলিয়েশন / Exfoliationকরে সাধারণত ত্বকের লোমকূপের মধ্যে জমে থাকা ময়লা, তেল, মেকআপ পরিষ্কার করা হয়। এর পাশাপাশি ত্বকের উপরিতলে জমে থাকা মৃত কোষ গুলো দূর করে। কিন্তু এক্সফোলিয়েশনের অর্থ ত্বকে স্ক্রাব ব্যবহার করাকে বুজায় না। মৃত ত্বকের কোষ অপসারণ এজেন্টকে এক্সফোলিয়েটর বলা হয়। এক্সফোলিয়েট দুই ধরনের

      1. কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর
      2. ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর

    ত্বকের যত্নে আমরা সাধারণত স্ক্রাবিং করার কথা বলে থাকি। কিন্তু আপনার ত্বকের জন্য স্ক্রাবিং আদৌ প্রয়োজন কিনা, তা কি আপনি জানেন? ত্বকের যত্ন রাখতে গেলে ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং এই ৩ ধাপ মেনে চলা অনেক জরুরি। CTM-এর পাশাপাশি মাঝের মধ্যে ত্বকে এক্সফোলিয়েট করতে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এক্সফোলিয়েশনের বিষয়ে খুঁটিনাটি 

    Exfoliation / এক্সফোলিয়েশনের কাজ

    আমাদের ত্বক ৩০-৪৫ দিন অন্তর নিজে থেকেই পরিবর্তন হয়। তাই মৃত কোষ জমতে থাকে আমাদের ত্বকের উপর। এক্সফোলিয়েশনের মাধ্যমে এই মৃত কোষগুলো ত্বকের ভিতর থেকে বাহির করে পরিষ্কার করে দেওয়া হয় এবং এতে ত্বক কোমল মসৃণ ও সতেজ দেখায়। নিয়মিত ত্বক এক্সফোলিয়েট করলে, এটি আপনার ত্বকের ভিতরের স্তরকে অর্থাৎ এন্ডোডার্মে ময়েশ্চারাইজ শোষণে সহযোগিতা করে।

    Exfoliation / এক্সফোলিয়েশনের পদ্ধতি

    কেমিক্যাল ও ফিজিক্যাল মূলত এই দুই পদ্ধতিতে ত্বকের এক্সফোলিয়েট করা হয়।

    ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন :

    ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন হল মূলত যেখানে আমরা স্ক্রাব এর সাহায্য নিই। স্ক্রাবিং এর মাধ্যমে ত্বক এক্সফোলিয়েট করা সবচেয়ে সহজ ও জনপ্রিয় পদ্ধতি। তবে, ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনে আপনার ত্বকের উপর খুব বেশি স্ক্রাব ব্যবহার করতে নেই এবং বেশি চাপ দিয়ে মুখের ত্বক ঘষতে নেই। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশনে আপনার ত্বকে র‍্যাশ, শুষ্কভাবের সম্মুখীন হতে পারেন। সংবেদনশীল ও ব্রণে আক্রান্ত ত্বকে স্ক্রাব ব্যবহার করা না করাই মঙ্গলজনক।

    কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন :

    কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন করা হয় নানান রকমের অ্যাসিডের মাধ্যমে। Alpha-hydroxy acids (AHAs), Beta-hydroxy acids (BHAs), স্যালিসিলিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের মতো উপাদান ব্যবহার করে ত্বকে এক্সফোলিয়েট করা হয়। বর্তমানে রূপচর্চার দুনিয়ায় এসব অ্যাসিড বা প্রসাধনীর ব্যবহার অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এতে ত্বকের উপর অতিরিক্ত কোন চাপ পড়ে না এবং ত্বক ভিতর থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়।

    এক্সফোলিয়েশন কত দিন অন্তর করা উচিত?

    নরম্যাল ত্বকে সপ্তাহে দু’দিন এক্সফোলিয়েট করা উচিৎ এবং তৈলাক্ত ত্বকে আপনি প্রায় প্রতিদিনই এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করতে পারেন। সংবেদনশীল ও শুষ্ক ত্বকে এক্সফোলিয়েটর করবেন না যে তা নয় একেবারে কম ব্যবহার করা উত্তম। শুধু যখন প্রয়োজন বলে মনে হবে, তখনই আপনি তা করুন। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে কোন সময় ত্বক এক্সফোলিয়েট করলে বিশেষ উপকার পাওয়া যায় ? সারাদিন শেষে রাতে ত্বক পরিষ্কার করা জরুরি। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজার এর পাশাপাশি রাতে আপনার ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন। সকালেও করতে পারেন তবে, সকালে ত্বক এক্সফোলিয়েট করার পর অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সানস্ক্রিন নিয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন….

    প্রথমেই আপনার ত্বক সম্বন্ধে জানুন

    ত্বক মূলত দুই স্তরে গঠিত হয়- এপিডার্মিস (Epidermis) ও ডার্মিস। এপিডার্মিস হচ্ছে তক্বের বহিস্তর, এটি আপনার ত্বকের পৃষ্ঠের উপর বা সার্ফেসে একটি প্রতিরক্ষামূলক হিসাবে কাজ করে এবং ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখে। কেরাটিনোসাইটস (Keratinocytes) হল এপিডার্মিস এর গঠনকারী  প্রধান কোষ, যা ডার্মিসের উপরে বেসাল এপিডার্মাল স্তরের গঠনে সাহায্য করে। কেরাটিনোসাইট ডার্মিস থেকে এপিডার্মিসকে বিভক্ত করে এবং পরবর্তীতে ত্বকের বাইরের প্রতিরক্ষামূলক স্তরগুলিতে স্থানান্তরিত হয় ।সম্পূর্ণ কোষ বিভাজন টি মাইটোসিস প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে।

    সব কোষের মত স্কিন সেলের ও বয়সসীমা আছে। মানে নির্দিষ্ট সময় পর এটা মৃত কোষে পরিণত হয়। বহিস্তকে অনেকগুলো স্তর আছে যার মধ্যে স্ট্রাটাম কার্নেয়াম সার্ফেস থাকে। মৃত কোষ গুলো ওখানেই জমা হতে থাকে। স্বাভাবিক নিয়মে কোষ পুনর্গঠিত ও পরবর্তীত হয়। কিন্তু কিছু ফ্যাক্টর আছে যা এই ন্যাচারাল প্রসেসকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। যেমনঃ এজিং (Aging), আবহাওয়ার পরিবর্তন, হরমোনাল প্রবলেম, ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহার করা, ডায়েট ইত্যাদি। মৃত কোষের সাথে ত্বকের তেলগ্রন্থি থেকে নিঃসরিত তেল আর ধূলোবালি মিশে রোমকূপ বন্ধ হলেই ত্বকের সমস্যা যেমন- স্কিনে ক্লগড পোর , রাফনেস, রিংকেল, ডার্ক প্যাচ দেখা যায়।

    কোন এক্সফোলিয়েটর আমার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করবে?

    কোন এক্সফোলিয়েটর আপনি করবেন এই প্রশ্নটা আপনার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাই তো? উভয় ধরনের এক্সফোলিয়েটরই কার্যকরী, শুধু আপনার ত্বকের ধরন বুঝে নির্বাচন করে নিতে হবে।

    ১) আপনি যদি ড্রাই টু নরমাল ত্বকের অধিকারী হন আর আপনার ত্বকে দ্রুত মৃত কোষের স্তর জমতে থাকে তাহলে স্ক্রাবিং করতে হবে সপ্তাহে ২ বার করে। এক্ষেত্রে আপনার ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেশি কার্যকর হবে। যারা বিভিন্ন কারণে স্কিন কেয়ার রুটিন সঠিক ভাবে মেনটেইন করেন না, এবং স্কিনে তেমন কোনো সমস্যা নেই, তাদের জন্য তাৎক্ষণিক সমাধান হিসাবে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেস্ট। এক্ষেত্রে হালকা বিড বা মাইল্ড বিডস আছে, এমন স্ক্রাব বেছে নিন।

    এক্সফোলিয়েশন / Exfoliation

    ২) আবার যাদের ত্বকে সংবেদনশীলতার কারণে দানাদার স্ক্রাবে ইরিটেশন, বিরক্তিকর অথবা  জ্বালা হয় , তাদের জন্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ভালো কাজ করে। অ্যাকটিভ বা ইনফেক্টেড একনের বা সংক্রমিত ব্রণের উপর যদি আপনি স্ক্রাব ঘষাঘষি করেন, কী অবস্থা হবে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। পিম্পল পপ  হয়ে আপনার ত্বকের আশেপাশে অংশেও জীবাণু ছড়িয়ে যাবে। এতে আপনার ব্রণ ও র‍্যাশের প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে। তাই আপনি অয়েলি-সেনসিটিভ ত্বকের জন্য কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর বেছে নিতে পারেন যেটা ত্বকের গভীর থেকে পরিষ্কার করে নতুন সজীব ত্বককে বের করে আনে। এক্ষেত্রে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ইউজ করলে বাইরে যাওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন লাগাবেন, কোনোভাবেই সানস্ক্রিন লাগানো ছাড়া বের হওয়া যাবে না।

    দুইটাই কি একসাথে ইউজ করা যায়?

    অনেকেই বলে থাকেন দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটর একই রকম সফলতা দিচ্ছে, এখন একইদিনে দু’টাই ইউজ করার প্রয়োজন আছে কি? অবশ্যই না, কারণ দুই ধরনের এক্সফোলিয়েটর একসাথে ব্যবহারের ফলে ওভার এক্সফোলিয়েশন হয়ে স্কিনের স্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধিতে বাঁধাগ্রস্ত হয় আর ডেড স্কিন সেলসের সাথে নতুন তৈরি হওয়া কোষগুলোও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডাবল টাইম স্ক্রাবিংয়ের ও কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ এতে ত্বকের এপিডার্মিস লেয়ার (epidermis layer) দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সঠিক নিয়মে এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা ও এর বিধি নিষেধ মেনে চলা জরুরি। 

    এক্সফোলিয়েশনের সঠিক নিয়ম

    আপনার উদ্দেশ্য শুধু ত্বকের ময়লা বা মৃত কোষের অপসারণ করা অর্থাৎ এক্সফোলিয়েট করা, স্কিনকে খুব বেশি টর্চার করা নয়। তাই সপ্তাহে দুই দিন এক্সফোলিয়েট করাই আপনার জন্য যথেষ্ট। যাদের লোমকূপ ব্লক থাকায় স্কিন একেবারেই ড্রাই আর রাফ দেখায় এবং হোয়াইট হেডস আছে, তারা স্ক্রাবিং এর আগে অবশ্যই একটু গরম পানির ভাপ নিবেন। আলতোভাবে সার্কুলার মোশনে নিচে থেকে উপরে স্ক্রাব ম্যাসাজ করতে হবে। স্ক্রাবিং শেষ করার পর মুখে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিয়ে মুখমণ্ডল ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এক্ষেত্রে আইস কিউব অ্যাপ্লাই করলে ওপেন পোরগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। তাই তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। ব্যস, এটুকুই করবেন।

    কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর সপ্তাহে একদিন একবার করে শুরু করা যেতে পারে। ত্বকের ক্লেনজিং আর টোনিং এরপর কটন প্যাড দিয়ে অথবা হাতের আঙ্গুল এর সাহায্যে চেপে চেপে অ্যাপ্লাই করে নিতে হয়। Alpha-hydroxy acids (AHAs), Beta-hydroxy acids (BHAs), ভিটামিন সি এগুলো একসাথে ত্বকের যত্নে রাখা যাবে না।রাতের স্কিন কেয়ারে যেকোনো একটি যুক্ত করতে পারেন কেননা কিছু প্রোডাক্ট সান-সেনসিটিভ বা ফটোসেনসিটিভ হয়ে থাকে। অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে শুরু করবেন। লক্ষণীয় যে স্ট্রং কেমিক্যাল সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট চোখের আশপাশের অংশে ব্যবহার করবেন না। প্রোডাক্টের লেবেল দেখে এর উপকরণ এবং ব্যবহার বিধি সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হোন।

    Leave a Comment

    Seraphinite AcceleratorOptimized by Seraphinite Accelerator
    Turns on site high speed to be attractive for people and search engines.